বলা হয়, তরুণেরা একটি রাষ্ট্রের শক্তি। দেশের প্রয়োজনে কঠিন অনেক কাজও করে ফেলে তারা। তবে এই তরুণেরা আসলে নিজেদের কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভাবে? অধিকাংশ তরুণ মনে করে, বৈশ্বিক সিদ্ধান্তে তাদের মতামত নেওয়া হয় না। এটাও সত্য যে ৩০ বছরের কম বয়সী এমন অর্ধেক জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তাদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে পারে না।
বিশ্বের ১৮৬টি দেশের ২৫ হাজার তরুণের ওপর একটি জরিপ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ‘গ্লোবাল শেপারস অ্যানুয়াল সার্ভে-২০১৭’ শীর্ষক ওই জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ মনে করে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মতামত নেওয়া হয় না
গ্লোবাল শেপারস অ্যানুয়াল সার্ভে হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আজকের বিশ্ব নিয়ে তরুণেরা তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করতে পারে। নানা পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এটি তরুণদের ওপর করা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ জরিপ। কীভাবে তরুণেরা বিশ্বকে ও বিশ্বের নানা চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করে, সেই সম্পর্কে মতামত নেওয়া হয় এ জরিপে।
এবারের জরিপটিতে পাঁচটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে এসেছে, যা তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে নতুন তথ্য দেয়।
১. কী নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবছে তরুণেরা…
বিশ্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছে—এমন বিষয়ের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন তরুণেরা। তারা সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে। পরপর তিন বছর জরিপে তরুণদের মূল ভাবনা উঠে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। তরুণেরা মনে করে না, প্যারিস চুক্তি দিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৮৭টি দেশ মিলে অঙ্গীকার করেছিল, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা তারা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখবে। এমনকি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে—এমন অঙ্গীকারও করে দেশগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধ, বৈষম্য নিয়ে চিন্তিত তরুণেরা। এ ছাড়া দারিদ্র্য, ধর্মযুদ্ধ এবং সরকারের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার বিষয়গুলোও তাদের উদ্বিগ্ন করে।
জরিপে তরুণদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন বিষয়টি বর্তমান বিশ্বকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। জবাবে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ জানিয়েছে, বিশ্বের ওপর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে। ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ দায়ী করেছে বড় দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধকে এবং ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ মনে করে, বিশ্বজুড়ে যে আয়বৈষম্য চলছে, তা নিয়ে এখনই ভাববার সময় এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষ দায়ী এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি আছে কি? এই প্রশ্নের সঙ্গে দৃঢ় সহমত পোষণ করে ৬৯ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ, আর সহমত পোষণ করে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে এ বিষয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ কোনো মতামত দেয়নি।