তনি আসফিমের কাছেই জানতে চেয়েছিলাম কীভাবে পরিচয় হয়েছিল জিল্লুরের সঙ্গে। আসফিম বলছিলেন, ‘একদিন দেখি জিল্লুর দুই হাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমাকে কেউ ধরেন, আমাকে কেউ ধরেন। আমি চোখে দেখি না।” জিল্লুরের এই কথাগুলো আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। জিল্লুর চোখে দেখে না। আমি তো দেখি। সে আমাদের বন্ধু। আমরা একই ক্লাসে পড়ি। ও কেন অন্যের কাছে সাহায্য চাইবে? তারপর থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি যতটা সম্ভব ওর
পাশে থাকব।’
জিল্লুর রহমান ও তনি আসফিম রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁরা দুজনই কিছুদিন আগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেছেন। তনি আসফিম জিল্লুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের প্রায় চার বছর খুব কাছ থেকে দেখেছেন। জিল্লুর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ। তাই তাঁকে বাসে তুলে দেওয়া, বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে আসা, ক্লাসের পড়ায় সহযোগিতা করা, এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসের সময়টুকু সঙ্গ দেওয়ার কাজ করেছেন তনি। সহপাঠীরা যখন দলবেঁধে আড্ডা দিয়েছে, হই-হুল্লোড় করেছে, তখন তনি আসফিম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বসে একাই সময় কাটিয়েছেন। জিল্লুরের সুবিধা-অসুবিধাটাই দেখেছেন সবার আগে। এক আকাশ উদারতা, গভীর সংবেদনশীলতা না থাকলে এমন বন্ধুত্ব অকল্পনীয়। তনি আসফিম আমাদের সমাজে একটা দৃষ্টান্ত। তিনি আমাদের শেখান বন্ধুত্বের অন্তর্গত সমীকরণ।
শুনতে হয়েছে কটূক্তি
শুরুতে অনেকেই তাঁদের এই বন্ধুত্ব নিয়ে নানান কটু কথা বলেছে। তনি সেসবে দমে যাননি। নিয়মিত জিল্লুর রহমানের হাত ধরে নিয়ে আসা-যাওয়ার শুরুতে তনি আসফিমের অনেক বন্ধু তাচ্ছিল্য করেছে, জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তাঁর প্রেম ধরে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। বন্ধুরা কেউ কেউ সন্দেহের কথা জানিয়ে খুদে বার্তাও পাঠিয়েছে। তনি সেসবের তোয়াক্কা করেননি। তনি আমাকে বলেছেন, ‘আমাদের বন্ধুরা যখন আমার বন্ধুত্ব নিয়ে বাজে কথা বলত, আমার মন খারাপ হতো।’ শুধুই বন্ধুত্ব আর পরোপকারের ইচ্ছা থেকেই তিনি জিল্লুরের বন্ধু হয়েছেন। ক্যাম্পাসে তনিকে একলা খুব একটা চোখে পড়ত না।