আতাউর রহমান: আপনি প্রায়ই বলেন, কিছু পেতে হলে তার জন্য কিছু দিতে হয়, জীবন উৎসর্গ করতে হয়। কেন বলেন কথাটি?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: বড় কিছু পেতে হলে আমাদের যে কিছু দিতে হবে—এ তো নতুন কথা নয়। কিন্তু তা নিগ্রহ বা কষ্টের মধ্য দিয়ে দিলে হবে না, দিতে হবে জীবনের সুপ্রচুর উদ্যাপনের ভেতর দিয়ে। সব কাজ সবার কাছে সমান আনন্দ নিয়ে আসে না। অথচ আনন্দ না থাকলে সাধনা শুকিয়ে যায়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খুব সুন্দর একটা কথা আছে—‘মানুষ কি ভেরেন্ডাগাছ খেতে পারে? পারে না; কিন্তু আখগাছ খেতে পারে। কেন? খেতে পারে এর ভেতরকার মাধুর্যের জন্য। এর ভেতর মিষ্টি রস আছে বলে।’ জীবনও তা-ই। এর পরিপক্ব ফলটি পেতে হলে এর ভেতরকার মাধুর্যটি আস্বাদন করতে হয়। না হলে এ হয়ে যায় খরখরে কাঠের মতো।
তাই জীবন উৎসর্গ করা মানে ভয়ংকর চেহারা নিয়ে দুরূহ শপথে জীবনকে শ্বাসরুদ্ধ করা নয়। উৎসর্গের আসল অর্থ আনন্দ। উৎসর্গ মানে উদ্যাপন। সর্বোচ্চ আনন্দ আর উদ্দীপনার আলোয় বিচ্ছুরিত হওয়া। তবে কর্মদানব আর কর্মবীর কিন্তু এক কথা নয়। কর্মদানব নিজেকে জবাই করে জীবনকে পায়, আর কর্মবীর পায় জীবনকে বিকশিত করে। ওটাই প্রকৃত উৎসর্গ। এ উৎসর্গ শ্রেয়তর জীবনের জন্য।
আতাউর: তাহলে কাজকে উপভোগ ও উদ্যাপন করতে হলে কী করতে হবে আমাদের?
সায়ীদ: নিজের হৃদয়কে অনুসরণ করো। হৃদয় কী খোঁজে, কী চায়—বুঝতে চেষ্টা করো। তোমার আত্মার ক্রন্দন, রক্তের আকুতি কোন পথের অভিসারী, নিশ্চিতভাবে জেনে নাও। মনে রেখো, তোমার ইচ্ছা কিন্তু তোমার ক্রীতদাস নয়, তারও একটা সার্বভৌম সত্তা আছে। তারও আছে আলাদা জগৎ, আলাদা আকাঙ্ক্ষা। তার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করো। সে যেদিকে যেতে চায়, সেদিকে যেতে দাও। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আমরা আমাদের লোভের জাঁতাকলের নিচে হৃদয়ের ওই চাওয়াগুলোকে নিষ্পেষিত করি। ওর স্বাধীন ইচ্ছার দিকে একেবারেই তাকিয়ে দেখি না।