স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনায় টিআইবি আগাগোড়া ভুল তথ্য তুলে ধরেছে -স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনায় টিআইবি আগাগোড়া ভুল তথ্য তুলে ধরেছে -স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ সংবাদ- স্বাস্থ্যখাত নিয়ে টিআইবি প্রকাশিত রিপোর্টটি মিথ্যা ও ভুল তথ্য সংবলিত উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাকালীন সংকটকালে দেশের স্বাস্থ্যখাত যখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত তখন টিআইবি দেশের স্বাস্থ্যখাতকে নিয়ে একটি অসত্য রিপোর্ট তুলে ধরেছে। টিআইবি’র রিপোর্টটি আগাগোড়াই ভুল তথ্য সংবলিত।
আজ রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনা যুদ্ধে শহীদ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ মনোয়ারের প্রথম মৃত্যূবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অনলাইন জুম অ্যাপে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে থেকে টিআইবি স্বাস্থ্যখাত নিয়ে মনগড়া সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, করোনার দুঃসময়ে টিআইবি মাঠে নেমে কোন কাজ করেনি। মাঠে কাজ করেছে দেশের স্বাস্থ্যখাতের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে তারা মুখস্থ বিদ্যার মতো ঢালাওভাবে স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করেছে।
টিআইবি’র করা কিছু সমালোচনা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো জানান, টিআইবি বলেছে দেশে কোভিড টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। অথচ দেশে কোভিড টেস্টিং কেন্দ্র মাত্র ১টি থেকে এখন ৫১০টি করা হয়েছে। টিআইবি বলেছে, হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি, অথচ এখন দেশে করোনা বেড সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। কিছুদিন আগেও ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালে প্রায় ১০০০ নতুন কোভিড ডেডিকেটেড বেড বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেখানে প্রায় সবই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধাপ্রাপ্ত এবং সেখানকার অর্ধেক সংখ্যকেই আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। টিআইবি বলেছে, দেশে আইসিইউ বেড সংখ্যা বাড়েনি। অথচ করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩০০ ভাগ আইসিইউ বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে দেশে মাত্র ২০০টির মতো আইসিইউ বেড ছিল। আর এখন আইসিইউ বেড সংখ্যা ১০০০টিরও বেশি হয়েছে। টিআইবি ভারতের সাথে ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তিতে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে যা মোটেও সত্য নয়। ভারতের সাথে চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিল স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার ও উন্মুক্ত। দেশের সব মানুষই জানে ভারতের সাথে কী কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির অবশিষ্ট টিকার দিতে পারেনি।
মন্ত্রী বলেন, টিআইবি বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার প্রসঙ্গে, টিকার প্রাধান্য সেট করা বা বিদেশগামী যাত্রীদের সেবা দানের যে সমালোচনা করেছে তা আগাগোড়াই মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এমনকি ভ্যাক্সিন প্রদান কার্যক্রম যখন গোটা দেশেই প্রশংসিত হয়েছে তখন টিআইবি সেটি নিয়েও সমালোচনা করেছে। অথচ দেশের করোনা মোকাবিলায় তাদের (টিআইবি) কোন ভুমিকা নাই। মাঠে কাজ করছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। দেশে মাত্র একটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল। সেটি এখন ১৩৪টি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই করোনা চিকিৎসা পেয়েছে। ঔষধ প্রাপ্তিতে কখনো দেশে কোন ঘাটতি হয়নি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখা হয়েছে। কোথাও কোন দুর্নীতি হলে সেটিতে দ্রুতগতিতে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যখন দেশে বিদেশে সরকারের সুনাম হয়েছে, তারা সেটি নিয়েও সমালোচনা করেছে। সুতরাং স্বাস্থ্যখাতকে নিয়ে টিআইবির এই মনগড়া মিথ্যা রিপোর্টটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
মন্ত্রী আরো বলেন, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তারা (টিআইবি) কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে, কিন্তু করোনা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য তারা করেনি। কারন, তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোন প্রচারণা বা ভূমিকাই রাখেনি। দেশের হাসপাতালগুলোর সমস্যা গত ৫০ বছরের। রাতারাতি সব সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে এটি প্রত্যাশা করাটা বিজ্ঞতার পরিচায়ক নয়। চিকিৎসা সেবায় গত এক বছরে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসাবান্ধব করা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার চিকিৎসক, নার্স সহ নতুন লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।

ভ্যাকসিন ক্রয় নিয়ে চীনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে দ্রুতই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। অন্যান্য দেশের সাথেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান জাহিদ মালেক।
মন্ত্রী আরো বলেন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির কথাটি এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারী হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্থ কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোন কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্যখাতের বড় কোন দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। এক্ষেত্রে যারাই স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম করেছে তাদেরকেই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়েছে।
সভায় মন্ত্রী শহীদ চিকিৎসক ডাঃ মাহমুদ মনোয়ারের মৃত্যুবার্ষিকীতে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা সহ নেতৃবৃন্দ।

Comments are closed.

More News...

পুরুষের কাজের প্রেরণা তার প্রিয়তমা …….লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন