বাফুফে নির্বাচন; সালাউদ্দিন বনাম কোটি ফুটবল ভক্ত!

বাফুফে নির্বাচন; সালাউদ্দিন বনাম কোটি ফুটবল ভক্ত!

বাংলাদেশ সংবাদ – বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আসন্ন নির্বাচন ধীরে ধীরে জমে উঠেছে। আগামী ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে ২১ পদের জন্য ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

গত ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বিলি হয়। গতকাল মঙ্গলবার ৪৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা হবে ১৩ সেপ্টেম্বর।

উল্লেখ্য গত ২৮ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়েছিল বাফুফের নির্বাচন। ২০ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল সেই নির্বাচন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ফিফা ও এএফসির অনুমতি নিয়ে নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল গত ৩০ এপ্রিল। ফিফা নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটিকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়।

এদিকে আসন্ন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে দৃশ্যত এখন পর্যন্ত একটি প্যানেল নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। সম্মিলিত পরিষদের ব্যানারে কাজী নাবিল আহমেদ-সালাম মুর্শেদীদের নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন নির্বাচনি ময়দানে। তবে তাদের বিপক্ষে বিচ্ছিন্নভাবে সব পদেই প্রার্থীতা রয়েছে।

যদিও ২০১৬’র বাফুফের নির্বাচনের আগে কাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছিলেন সেটিই তাঁর শেষ নির্বাচন। তৃতীয় মেয়াদে সালাউদ্দিন সভাপতি হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘এটাই আমার শেষ মেয়াদ আর নির্বাচন করব না।’তখন তিনি ফুটবলকে সুন্দরভাবে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে আদতে কিছুই হয়নি, উল্টো পেছনের দিকে হেঁটে ফুটবল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা থেকে সারা দেশেই বর্তমানে এ অবস্থা বিরাজ করছে বলেও বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে বাফুফের বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রভাবশালী কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় সরাসরি জড়িয়ে পড়েন পাতানো খেলার সঙ্গে। মিডিয়ার প্রভাবে প্রিমিয়ার লিগে পাতানো ম্যাচের অভিযোগ কমলেও জুনিয়র ডিভিশনগুলোতে হরহামেশাই হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এটাও একধরনের দুর্নীতি বলছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে রেফারিদের মান কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পক্ষপাতিত্বমূলক রেফারি ফুটবলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনও অভিযোগ এসেছে, ম্যাচের রেফারি মনোনয়নে বড় কর্তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে।

এদিকে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগে বাফুফের তিন কর্মকর্তাকে গত বছর চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরন ও বাফুফের হিসাব বিভাগের প্রধান আবু হাসানকে হিসাবের বিবরণী জমা দিতে বলেছিলো দুদক। কয়েক দফা দুদক কার্যালয়ে হাজিরাও দিয়েছিলেন অভিযুক্তরা।

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা হয়ে থাকে। এবারের নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের অংশগ্রহণ করার বিপক্ষে সোস্যাল মিডিয়ায় ফুটবল প্রেমিরা বিভিন্ন প্রতিবাদ শুরু করেছে। বাফুফের ফেসবুক অফিশিয়াল পেজে তারা সালাউদ্দিনকে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর জন্য কমেন্ট করছেন। এছাড়া ফিফার অফিশিয়াল পেজসহ বিভিন্ন ফুটবল সংশ্লিষ্ট সোস্যাল গ্রুপ ও পেজে কাজী সালাউদ্দিনের বিপক্ষে ফুটবল প্রেমিরা সোচ্চার রয়েছেন। এদিকে অভিযোগ উঠেছে যারাই সালাউদ্দিনের বিপক্ষে বাফুফে পেজে কমেন্ট করছেন তাদেরই বাফুফে পেজ থেকে ব্যান করে দেওয়া হচ্ছে। তরিকুল নামে একজন তরুণ ফুটবল প্রেমি বলেন “আমরা বাংলাদেশের ফুটবলকে ভালোবাসি, এদেশের জাতীয় দলের ফুটবলের পেজে সব সাধারণ ফুটবল প্রেমিদের মতামত জানানোর অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমাদের পেজ থেকে ব্যান করে দেওয়া হচ্ছে। এটা ফুটবলের উন্নয়নের জন্য মোটেও কাম্য নয়”

এদিকে দেশের ফুটবল সংশ্লিষ্টরা মনে করেন বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবল এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের দিকে সবার অভিযোগের তীর। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৯৪। র‌্যাংকিংয়ে স্মরণকালের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল (১৯৭) বর্তমান কমিটির মেয়াদেই। অথচ একসময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাংকিংয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থা ছিলো ১১০ তম(এপ্রিল,১৯৯৬)।

এদিকে বরাবরই কাজি সালাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। তার আমলে এদেশের ফুটবল বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে বলেছেন।

কাজী সালাউদ্দিনের ১২ বছরে ৭৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ম্যাচ জিতেছে মোটে ১৯টি। ড্র করেছে ১৮টি, হেরেছে ৩৭টি ম্যাচে। ভারত ও মালদ্বীপের সঙ্গে কোনো জয় নেই। যা হয়তো আশাব্যঞ্জক নয়। তার থেকেও দু;স্বপ্নের কথা হলো। চার বছর আগে ভূটানের কাছে হেরে এক বছর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে ছিল বাংলাদেশের ফুটবল।

তবে গেল বছর সে গেড়ো কাটিয়ে উঠেছিল জেমি ডের দল। লাওসকে হারিয়ে খেলার সুযোগ পায় বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। সুখস্মৃতি বলতে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে মিয়ানমারের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়।

এর আগে শক্তিশালী তাজিকিস্তানকে ২-১ গোলে হারায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। আর গেলো বছরের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ভারতের সঙ্গে ড্র। শেষ মুহূর্তে গোল না খেলে হয়তো ভারতকে তাদের মাটিতে হারিয়ে গর্জন তুলতো জামাল ভূঁইয়ারা।

উল্লেখ্য ২০০৮ সালের ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে বাফুফের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। সেই পদে থাকার এক যুগ পূর্তি হয়েছে বাংলাদেশের একসময়ের সেরা ও কিংবদন্তি এই ফুটবলারের। তারপর ২০১২ সালে বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় দফা সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। এরপর ২০১৬ সালে তৃতীয় বারের মত নির্বাচনে জিতে বাফুফের সভাপতি হোন কাজি সালাউদ্দিন।

এবার নিয়ে টানা চতুর্থবারের মত বাফুফে সিংহাসনে বসার জন্য লড়ছেন কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থবার নির্বাচন নিয়ে ফুটবল প্রেমিদের মাঝে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ফলে শেষ পর্যন্ত কার জয় হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Comments are closed.

More News...

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিসহ ২৩৩ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ভোটগ্রহণ ৯ মার্চ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন