বাংলাদেশ সংবাদ- দিল্লির সহিংসতার জন্য কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও দিল্লি পুলিশের সমালোচনা করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধর। বুধবার তাকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করা হল।
দিল্লি হাইকোর্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী বিচারপতি এস মুরলিধরের বদলির বিজ্ঞপ্তি বুধবার রাতে ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম থেকে এটি সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি মুরলিধরকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হল।
গত সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নিতে আর্জি জানিয়েছিল।
বুধবার বিচারপতি মুরলিধর বলেছিলেন, “আমরা আর একটা ১৯৮৪-র মতো ঘটনা হতে দিতে পারি না দেশে।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি সরকার, উভয়কেই নির্দেশ দিয়েছিলেন দিল্লির সহিংসতা বন্ধে একসঙ্গে কাজ করতে।
চার বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, অভয় ভার্মা ও পরবেশ ভার্মার উস্কানিমূলক ভাষণের ভিডিওকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া পিটিশনের শুনানিতে বিচারপতি মুরলিধর ওই মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন ওই চার বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়নি। তিনি দিল্লির পুলিশ প্রধানকে এফআইআর না দায়ের করার পরিণতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার কথা বলেন।
সেই সময় কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন, এফআইআর সঠিক সময়েই দায়ের হবে। একথায় বিচারপতি মুরলিধর প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কোনটা সঠিক সময়, মিস্টার মেহতা? শহর তো জ্বলছে।”
এদিকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছে।এ ঘটনায় আহত হয়েছে ২৫০শ’র বেশি মানুষ। রবিবার উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে পাল্লাপাল্টি বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূচনা হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ওই এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সেখানে মানুষজনকে ঘর থেকে বের হতে এবং দোকানপাট খুলতে নিষেধ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, সংঘর্ষের ঘটনা ক্রমশ ব্যাপক আকার নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক পুলিশ সদস্যসহ ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫০শ’র বেশি মানুষ। ৭০ জনের শরীরে গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিকে টুইট বার্তায় দিল্লিবাসীকে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির ক্ষমতাসীন আম-আদমি পার্টি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকায় তারা কিছু করতে পারছেন না। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন এবং তিনি চান দুর্গত এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হোক।
এছাড়া আপ নেতারা এই সংঘর্ষের জন্য বিজেপিকে দায়ী করে বলেছেন, বিজেপি দেশে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। যার প্রতিফলন দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে। দিল্লির বিজেপি বিধায়ক কপিল মিশ্রা রবিবার ঘৃণা ছড়িয়ে এই দাঙ্গার সূচনা করেছেন। তারা আরও বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়নি।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, দিল্লিতে কবরের নিরবতা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতেও সব দল এক হতে পারেনি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনদিন সময় লেগেছে। এত সময় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কোথায় ছিল? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনও কার্যক্রম চেখে পড়েনি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। তাই আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা উচিত।
সোনিয়া গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতির জন্য মোদী-শাহ ও বিজেপির সাম্প্রদায়িক আদর্শকে দায়ী করে বলেছেন, তারা শুরু থেকেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে আসছে। ক্ষমতায় এসে তারা তাদের আদর্শের প্রতিফলন করছে। কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এরকম চলতে পারে না।
কংগ্রেস সভানেত্রী আরও বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য মোদী সরকার সম্পূর্ণ দায়ী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্ক্ষলা ফেরাতে এর কোনও বিকল্প নেই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে এবং এটাই যথেষ্ট পদক্ষেপ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
সহিংসতা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ গত ২৪ ঘণ্টায় তৃতীয়বারের মতো বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ছিলেন আইপিএস অফিসার এসএন শ্রীবাস্তব। মঙ্গলবার তাকে বিশেষ পরিস্থিতি পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছিল। এই পরিস্থিতিতে সহিংসতা থামাতে সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে জানানো হয়েছিল, ঘটনাস্থলে যথেষ্ট পরিমাণে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের দফতরে এসে পরিস্থিতির খোঁজ নেন। অজিত ডোভাল সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরী চক প্রভৃতি জায়গায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন।
মঙ্গলবার গভীর রাতে এক নির্দেশে দিল্লি হাইকোর্ট পুলিশকে নির্দেশ দেয় সহিংসতার ঘটনায় আহতদের হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ পথের বন্দোবস্ত করতে এবং তাদের জন্য আপৎকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
রবিবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে এ সহিংসতা শুরু হয়। সেখানে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি, ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে অন্তত তিনটি স্থানে এটা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সহিংসতা অব্যাহত ছিল।
উভয়পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ, লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় দুই পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। টেলিভিশনে প্রচারিত কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সংঘর্ষস্থলের আশপাশের ভবনে আগুন জ্বলছে।
তবে ওই এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়। বিজেপি সমর্থকরা আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দিচ্ছে। ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে লুট-পাট চালাচ্ছে।
এনডিটিভির তিনজন সাংবাদিক এবং একজন ক্যামেরাপার্সন সংবাদ সংগ্রহকালে আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
মৌজপুরের একজন বলেন, “কোনও কোনও জায়গায় পুলিশের উপস্থিতি খুবই কম। হামলাকারীরা মানুষকে হুমকি দিচ্ছে, দোকানপাট ভাঙচুর করছে।”
প্রসঙ্গত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের আগে ভারতে যাওয়া অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই আইন বৈষম্যমূলক ও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান পরিপন্থী। এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) ও এই আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন করার চেষ্টা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যেই দিল্লির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা চান। তারা এ নিয়ে খুবই পরিশ্রম করছেন। আমি সাধারণ মানুষের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণের কথা শুনেছি, তবে তা নিয়ে আলোচনা করিনি। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।”
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে তার অবস্থান জানতে চাইলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি তা আলোচনা করতে চাই না, আমি তা ভারতের ওপর ছাড়তে চাই। আশা করি, ভারতের মানুষের জন্য তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদে পাশ হয় বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনটি। সেটিকে মুসলিম বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন সমালোচকরা। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দিল্লি সংঘর্ষের আগেই ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Comments are closed.
এ রকম আরও খবর
ঢাকায় নৌকার হাট
কবির হোসেন রাজধানীর খিলগাঁও থানার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
| জাতীয়দামি জামদানি কেন লুকিয়ে রাখেন তাঁতি?
অফ হোয়াইট আর সোনালি জরির কাজ করা একটা জামদানি দেখাচ্ছিলেন
| অন্যান্যফলের মেলা
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল
| জাতীয়খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার
খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের
| তথ্যপ্রযুক্তিফুলের রাজ্য
সবুজ-শ্যামল পাহাড়েঘেরা একটি অপূর্ব জায়গা হবিগঞ্জের ‘দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট’।
| জাতীয়ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি আর গাড়ি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট চলছে। আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে
| জাতীয়পানির এটিএম
এটিএমে টাকা মেলে, এটা পুরোনো কথা। কিন্তু রাজধানীতে এমন দুটি
| অন্যান্যআরেকটি পাকিস্তানি রূপকথা
কে না জানে, ক্রিকেট বিস্ময় উপহার দিতে ভালোবাসে। তাই বলে
| জাতীয়More News...