নেত্রী যা সিদ্ধান্ত দিবেন তাই করবো – জয়নাল হাজারী

নেত্রী যা সিদ্ধান্ত দিবেন তাই করবো – জয়নাল হাজারী

বাংলাদেশ সংবাদ – ফেনীর ‘গডফাদার’ খ্যাত বহুল আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক সংসদ সদ্য জয়নাল হাজারী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দল থেকে বহিষ্কারের প্রায় দেড় দশক পর আবারও কোনও দলীয় পদে ফিরলেন হাজারী। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য হাজারীর হাতে ৪০ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পর গত সোমবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসে একটি চিঠি নেন জয়নাল হাজারী। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার হাতে এ চিঠি তুলে দেন।

দেড় দশক আগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া ফেনীর এক সময়ের আলোচিত-সমালোচিত এই নেতা রাজনীতি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কেন আবারও ফিরে এলেন? আওয়ামী রাজনীতিতে তার প্রয়োজনীয়তা কী? ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জয়নাল হাজারী।

তিনি বলেন, ‘আমার এখন আওয়ামী রাজনীতিতে কিছু দেয়ার নেই। কোনও কর্মসূচি নেই। কোনও পরিকল্পনা নেই। শুধুমাত্র আমার নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে আদেশ দেবেন সেটা পালন করবো। এর বাইরে কিছু করার নেই।’

ফেনী আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জয়নাল হাজারী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফেনীতে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়। এই পেক্ষাপটের পেছনে হাজারীকে সন্দেহ করা হয় এবং ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে হাজারীর বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী।

ওই সময় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এলে আবার প্রকাশ্যে আসেন তিনি এবং ভারত থেকে দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করেন। জয়নাল হাজারী ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ওই সময় থেকে দীর্ঘ দিন রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয়।

কিন্তু এই দীর্ঘ বিরতির পর আবার কেন ফিরলেন রাজনীতিতে? কেন নিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টার পদ? এমন প্রশ্নের উত্তরে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘আমি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য কারো কাছে বলিনি কিংবা ইচ্ছেও প্রকাশ করিনি। নেত্রী বলেছিলেন, ‘এখন চুপ থাকো’। তাই এতদিন চুপচাপ ছিলাম। নেত্রী বলেছেন, ‘এখন আবার আসেন’। নেত্রীর ডাকে তাই আবার এসে গেলাম।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতে উপদেষ্টার দায়িত্ব উপদেশ দেয়া। কিন্তু এই উপদেশ কে শোনে! এটা একটা অলঙ্কারিক পদ। কোনও দায়-দায়িত্ব নেই। যারা নির্যাতিত, যারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা ত্যাগী তাদের এই দিয়ে সম্মানিত করা হয়। তাই হয়তো নেত্রী আমাকেও দিয়েছেন।’

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সবশেষ সংসদ সদস্য থাকাকালে দলের ও বিরোধী দলের লোকদের ওপর তার হাজারী বাহিনীর নির্যাতনের খবর তৎকালীন সময়ের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

কিন্তু জয়নাল হাজারীর ভাষ্য, ‘স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। আমার প্রধান শত্রুত জামায়াত-শিবির। তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমাকে বাঁচতে হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘ফেনীর সবকিছু এখন নষ্ট হয়ে গেছে। খারাপ হয়ে গেছে। তবে আমার এখন আর আগের সেই শক্তি নেই যে ফেনী ফিরে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে ফেলবো। আর ফেনীতে ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে ফেরার সিদ্ধান্তও এখনও নিইনি। তবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) বললে অবশ্যই ফিরে যাবো। সক্রিয় হবো। এমনকি নেত্রী চাইলে আবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনও করবো।’

ফেনীতে নিজের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার এখন আর আগের জনপ্রিয়তা নেই। জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। আমার মনে হয় আমি একটি ভোটও পাবো না। শরীরটাও আগের মতো নয় যে মাঠে নামবো। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে জনপ্রিয়তা লাগবে না, আওয়ামী লীগের লোকেরাই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। এখন নিজের সিদ্ধান্তে কিছুই করবো না। নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’

Comments are closed.

More News...

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটিসহ ২৩৩ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ভোটগ্রহণ ৯ মার্চ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন