বাংলাদেশ সংবাদ-ডেঙ্গু আতঙ্কে কাঁপছে গোটা দেশ। প্রতিদিনই আক্রান্ত মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। বলা যায় ডেঙ্গু এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শহরে কি গ্রামে- সবাই যতটা সম্ভব বাসাবাড়ি ও আঙিনা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছেন। ঘরের ভেতর জ্বালানো হচ্ছে কয়েল, কিংবা করা হচ্ছে মশা নিরোধক স্প্রে।
তবে ডেঙ্গু মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে এইসময়ে সবচেয়ে বেড়েছে মশারির ব্যবহার। অনেকেই দিনের বেলায়ও বাসাবাড়িতে মশারি টানিয়ে রাখছেন। যারা সারা বছর ঘরে মশারি ব্যবহার করেন না তারাও এখন বাজারে যাচ্ছেন মশারি কিনতে। ফলে মশারি প্রস্তুতকারী দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে বাড়তি ব্যস্ততা। দিনরাত মশারি সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এডিস মশার উপদ্রব মাত্রা ছাড়ালেও ঢাকার দুই সিটিতে এখনও কার্যকর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এ কারণে ব্যক্তি উদ্যোগে সচেতন মানুষ ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকতে সব কিছু করছেন। এমনকি পাড়া-মহল্লার দোকানে দোকানে মশা তাড়ানোর সাধারণ কয়েল, ইলেকট্রিক কয়েল, মশারি, ব্যাট, স্প্রে থেকে শুরু করে মশা নিধন সংক্রান্ত সকল পণ্যের বিক্রি বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এখন শুধু বিভিন্ন দোকান বা শোরুমে নয়, সুপারশপগুলোতেও হরদম বিক্রি হচ্ছে মশারি।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মাসে মশারির পাশাপাশি মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণের উপকরণ কয়েল, অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক ব্যাটের চাহিদাও বেড়েছে। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে মশারি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু আতঙ্কের কারণে মশারি বিক্রি বেড়েছে।
মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও এখনও সবার ভরসা মশারিতে। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট, কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সারা ঢাকায় এখন একটাই আতঙ্ক- তা হলো ডেঙ্গু। এ কারণে মশারি বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
সোমবার গুলিস্থানের খদ্দর মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ২০/২৫ টি দোকানে শুধুই মশারি ও মশারি তৈরির কাপড় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মশারি বিক্রি হয়। তবে এর বেশিরভাগই যায় ঢাকার বাইরে। কিন্তু এবার রাজধানীতে ডেঙ্গু আতঙ্কের কারণে ঢাকাতেই প্রচুর পরিমাণে মশারি বিক্রি হচ্ছে।
মশারি ব্যবসায়ী ইউনুছ বলেন, ‘এবার রাজধানীতে বেশি মশারি বিক্রি হচ্ছে। কারণ এ বছর ডেঙ্গু ব্যাপক হরে বেড়েছে। সবাই মশারি কিনতে আসছে। আমরা চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাসায় থাকেন তাদের অধিকাংশই বছরের অন্যান্য সময়ে মশারি ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এখন ডেঙ্গুর ভয়ে তারাও মশারি কিনতে আসছেন।’
খদ্দর মার্কেটে কথা হয় মশারি কিনতে আসা মামুন হোসেন নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে মশারি ছাড়া থাকতাম। কিন্তু ডেঙ্গু যেভাবে দেখা দিয়েছে তাতে মশারি ছাড়া ঘুমানো নিরাপদ নয়। বাড়িতে মেহমান এলে সবাই যাতে একসঙ্গে ঘুমাতে পারে, সে জন্য ১০ ফুট—৭ ফুট মাপের একটি মশারি বানাতে এসেছি।’
মশারির বাজারে চাপ বাড়ায় দর্জিদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে। কাপ্তান বাজার এলাকার সিফাত মশারি স্টোরের মালিক বলেন, ‘কাজের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। আমার দোকানের তিনটি সেলাই মেশিন থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯০টি মশারি তৈরি করা হচ্ছে।’
এদিকে গুলিস্থানের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও মশারি বিক্রির ধুম পড়েছে। সেখানে রফিকুল আলম নামে এক মশারি বিক্রেতা বলেন, ‘আগে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করতাম। এখন মশরারি বাজার ভালো। তাই মশারি বিক্রি করছি। প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ টা মশারি বিক্রি করতে পারি। ভালো লাভ হচ্ছে।’
গুলিস্তানে জিপিওর উল্টো পাশের ফুটপাতে সারিবদ্ধ হয়ে কয়েকটি মশারির দোকান বসতে দেখা গেছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মানের মশারিগুলো দেড়শ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সেখানে মশারি বিক্রেতা তানভীর বলেন, ‘এখন মশারি বেচার মৌসুম। মশা বাড়ছে, বিক্রিও বাড়ছে। আমার এই ছোট দোকানেও প্রতিদিন ১০-১২টা মশারি বিক্রি হচ্ছে।’
ফুলবাড়িয়ার সিটি সুপার মার্কেটের নিচতলার দোকানগুলোতে পাইকারি দরে শুধু মশারি ও মশারির কাপড় কিনছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দোকানিরা। প্রতিটি দোকানের সামনেই বাড়তি ভিড়। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশারির বাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মাসখানেক আগেও যেখানে মশারির বেচাবিক্রি ছিল টুকটাক এখন সেখানে বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ। গড়ে প্রতিদিন প্রতিটি দোকানে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মশারি বিক্রি হচ্ছে। একই মার্কেটের সুমন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা বলেন, ‘গতকাল ৪৮ হাজার টাকার মশারি বিক্রি করেছি। প্রতিদিনই কমবেশি ভালো বিক্রি হচ্ছে। ’
তবে ক্রেতাদের রয়েছে অনেক অভিযোগ। ক্রেতারা বলছেন, ডেঙ্গুর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় এই সুযোগে মশারির অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফলে মশারি কিনতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ।
গাজীপুর থেকে ফুলবাড়িয়ার সিটি সুপার মার্কেটে পাইকারি দরে মশারি কিনতে এসেছিলেন এক ক্রেতা, তিনি বলেন, ‘আমরা বিক্রির জন্য মশারি কিনতে এসেছি। এখান থেকে কিনে গাজীপুরে নিয়ে বিক্রি করবো। কিন্তু মশারির দাম অনেক বেশি ধরা হচ্ছে। অন্যান্য সময় যে মশারির দাম ছিলো ১৫০ টাকা সেই মশারি এখন ২৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে।’
Comments are closed.
এ রকম আরও খবর
ঢাকায় নৌকার হাট
কবির হোসেন রাজধানীর খিলগাঁও থানার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
| জাতীয়দামি জামদানি কেন লুকিয়ে রাখেন তাঁতি?
অফ হোয়াইট আর সোনালি জরির কাজ করা একটা জামদানি দেখাচ্ছিলেন
| অন্যান্যফলের মেলা
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল
| জাতীয়খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার
খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের
| তথ্যপ্রযুক্তিফুলের রাজ্য
সবুজ-শ্যামল পাহাড়েঘেরা একটি অপূর্ব জায়গা হবিগঞ্জের ‘দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট’।
| জাতীয়ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি আর গাড়ি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট চলছে। আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে
| জাতীয়পানির এটিএম
এটিএমে টাকা মেলে, এটা পুরোনো কথা। কিন্তু রাজধানীতে এমন দুটি
| অন্যান্যআরেকটি পাকিস্তানি রূপকথা
কে না জানে, ক্রিকেট বিস্ময় উপহার দিতে ভালোবাসে। তাই বলে
| জাতীয়More News...