পরিচয় মিললো ট্রাম্পকে নালিশ করা হিন্দুনেত্রীর

পরিচয় মিললো ট্রাম্পকে নালিশ করা হিন্দুনেত্রীর

বাংলাদেশ সংবাদ – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু বিলীন হওয়ার অভিযোগ তোলা সেই নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। প্রিয়া সাহা নামের ওই নারী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। পাশাপাশি প্রিয়া সাহা বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদেরও একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার চরবানিরীর মাটিভাঙ্গা নাজিরপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। রোকেয়া হলে থাকতেন তিনি। সে সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গত বছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক। কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয়া সাহার দুই মেয়ে বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে সেখানে যান প্রিয়া সাহা।

বুধবার (১৭ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ধর্মীয় নীপিড়নের শিকার হওয়া ১৯টি দেশের ২৭ জন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে প্রিয়া সাহা নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান বিলীন হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। সেখানে এখনো ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু থাকার জন্য সাহায্য করুন।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার বাড়ি-ঘর হারিয়েছি, তারা আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমরা জমিজমা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা (সরকার) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন পর্যন্ত।

এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, কারা জমি দখল করেছে, করা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?

ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে ওই নারী বলেন, তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।

এ খবর সম্প্রচার করে মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভিডিওটি এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য করছেন অনেকেই।

তবে, প্রিয়া সাহা কোনও সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং কিসের ভিত্তিতে এসব অভিযোগ করেছেন সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানার জন্য প্রিয়া সাহার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার গতকাল শুক্রবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে প্রিয়া সাহার দেয়া তথ্য সঠিক নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে-অপরকে শ্রদ্ধা করে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার প্রথম আট মাসের দায়িত্ব পালনকালে আমি বাংলাদেশের আটটি বিভাগেই ঘুরেছি। মসজিদ, মন্দির ও চার্চে গিয়ে ইমাম-পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আমি এসেছি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে, আমার কাছে যেমনটা মনে হয়েছে, এখানকার ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের লোকজন একে-অপরকে শ্রদ্ধা করে। তাই আমি মনে করি, তার অভিযোগ সঠিক নয়, বরং ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। যদিও কোনো দেশই সংখ্যালঘুদের অধিকার দিতে সফলতা পায়নি।

এদিকে শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা নামের বাংলাদেশি নারী যে অভিযোগ করেছেন, তা উদ্দেশ্যমূলক।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নালিশ সংক্রান্ত ভিডিওটি দেখলাম। তিনি যে অভিযোগ করেছেন এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। ওই নারী কখনও এ ব্যাপারে আমাদের কাছে আসেননি। কিংবা পুলিশ প্রশাসনের কাছেও যাননি। আমাদের পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ থাকে যাতে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার না হন।

মন্ত্রী আরও বলেন, এই নারী যা বলেছেন তা চক্রান্তের অংশ বলে মনে করছি। আমি এখনও বলব, কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমাদের বলুক বা পুলিশকে বলুক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার কঠোর সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রিয়া সাহার মিথ্যা ওই অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানান এবং তিনি (প্রিয়া সাহা) কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখাসহ তার অভিযোগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে বলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রিয়া সাহার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেলে হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে ফোন কেটে দেন।

হিন্দু বৗদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ব্রেকিংনিউজকে বলেন, প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা তার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এ বিষয়ে তিনিই ভালো ব্যাখা দিতে পারবেন।

প্রিয়া সাহার আমেরিকা যাওয়ার প্রসঙ্গে রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া সংগঠনের ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজন। তাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সেখানে পাঠানো হয়নি। ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়টি আমি জানি না।

পরে প্রিয়া সাহার বেসরকারি সংস্থা সংস্থা শারি-এর কার্যালয়ে ফোন করা হলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।

Comments are closed.

More News...

পুরুষের কাজের প্রেরণা তার প্রিয়তমা …….লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন