বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদলেন নির্বাচন কমিশনার

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদলেন নির্বাচন কমিশনার

বাংলাদেশ সংবাদ – নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মহান স্বাধীনতা দিবসে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদলেন।

আজ আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় চোখের পাতা ভারি হয়ে উঠে তার। এসময় কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।

একাত্তরের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে মাহবুব তালুকদার বলেন,  ‘আজ আমার বারবার কার কথা মনে পড়ছে আপনারা জানেন? আমার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা। আমার পরম সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সরকারিভাবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক স্মৃতি।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনই তিনি আমায় ডেকে বলেন, মাহবুব তুমি আমার সঙ্গে থাকবা। আমাকে রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদবি বড় কথা নয়, দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার পর স্বভাবতই আমি খুব খুশি হই। আমার দায়িত্ব পড়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নেয়ার। সিদ্ধান্ত হয় দুপুরে খাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিশ্রামের সময়টুকুতে আমি তার রুমে ঢুকে যাব। তিনি আমাকে বলেন, যদি কোনো অজুহাতে ডিকটেশন দেওয়ার জন্য তিনি সময় না দিতে পারেন, তাহলে আমি যেন জোর করে ডিকটেশন নিই।’

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সেইমতে, আমি পরপর তিনদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নিই। তার ডিকটেশন রেকর্ডও করি। চতুর্থ দিন এসে বঙ্গবন্ধু বেঁকে বসেন। বলেন, তোমার জন্য তো আমি বিশ্রামটুকুও নিতে পারছি না। আমি তাকে বলি, আইয়ুবের শাসন, আপনার ছয় দফা, পাকিস্তানের জেলে বন্দির দিনগুলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা- এরকম গুরুত্বপূর্ণ সব অধ্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে তো আপনাকে ডিকটেশন দিতে হবে। আপনার বিশ্রামের সময় আপনাকে বিরক্ত করা আমারও ভালো লাগে না। তাই আপনি আমাকে অন্য একটা সময় বের করে দিন।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনছি, পরিবারের বিয়ে-শাদি শেষ করে দিয়েছি। সামনেই ডিকটেশন নেয়ার সময় বের করে দেব। কোনো কিছুই আটকে থাকবে না। এরপরই সেই ঘৃণ্য আগস্ট’, সভায় বলেন মাহবুব তালুকদার।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসের। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান যেদিন মারা যান। সেদিন আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সারা দিন ছিলাম। চল্লিশার দিনে ঠিক হয় বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। গাজী জাহাজে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। আমার জাহাজ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকায়, কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেওয়ার কথা মনে হয়নি। রাতে জাহাজ ছাড়লে দেখি, আমার শোবার কোনো জায়গা নাই। একপাশে একটি খালি সোফা পেয়ে শুয়ে পড়ি। পাশেই তখনকার এডিসি রাব্বানি সাহেব ছিলেন। মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, রাব্বানি জেগে আছেন। আমার মাথার নিচে বালিশ। আমি অবাক হয়ে রাব্বানিকে জিজ্ঞেস করি, এই বালিশ আমার মাথার নিচে কে দিলেন? রাব্বানি বলেন-রাতে বঙ্গবন্ধু রাউন্ডে এসেছিলেন। তিনি দেখেন আপনি মাথার নিচে হাত দিয়ে সোফায় শুয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু তার রুমে গিয়ে বালিশ নিয়ে এসে আপনার মাথার নিচে রেখে গেছেন।’

ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন,   ‘আমি জানতাম বঙ্গবন্ধুর দুটি বালিশ ছাড়া ঘুম হয় না। তখন আমি বালিশ ফিরিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর রুমের দিকে যাওয়ার কথা বলি। রাব্বানি জানান, গিয়ে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন।’

Comments are closed.

More News...

পুরুষের কাজের প্রেরণা তার প্রিয়তমা …….লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন