“বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” – মোঃ মিজানুর রহমান

“বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” – মোঃ মিজানুর রহমান

বাংলাদেশ সংবাদ – বাঙ্গালী-বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বুকে জেগে থাকা এক অবিস্বরণীয় নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার কারনে এদেশের মানুষ শেখ মুজিবকে দিয়েছিল “বঙ্গবন্ধু” উপাধী। বাংলার মানুষ এই মহান নেতাকে জাতির জনক হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বাঙ্গালীর মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাতগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন বাঙ্গালীর অধিকার রক্ষায় ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তারই নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।শেখ মুজিবের তীব্র রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ও এদেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবসা থেকেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন। মূলত ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী। ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি মূখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তীতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্ধী ঐ স্কুলে পরিদর্শনে গেলে শেখ মুজিবুর রহমান একদল ছাত্রদের নেতৃত্ব দিয়ে তাদের কাছে যান এবং স্কুলের ছাদ সংস্কারের জন্য আবেদন জানান। সে সময় উপস্থিত সবাই শেখ মুজিবের সাহসিকতা থেকে বিস্মিত হন এবং প্রশংসা করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সময়ের সাথে সাথে শেখ মুজিব রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪০ সালে নিখিল ভারতের মুসলিম ফেডারেশন এবং ১৯৪৩ সালে বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে হোসেন সোহরাওয়ার্ধীর সান্নিধে আসেন এবং বঙ্গীয় মুসলীম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ার এক ছাত্র সম্মেলনে শেখ মুজিবকে ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মনোনীত করা হয়।

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ বর্তমান ছাত্রলীগ গঠন করেন। মূলত এই সময় বিশেষ করে তিনি বাঙ্গালীর দারিদ্র্য, বেকারত্ব দূরীকরণ ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দিকে ঝুকে পড়েন। ভাষা আন্দোলনেও শেখ মুজিবের ছিল বিশেষ অবদান। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজীমুদ্দীন গণ পরিষদের এক অধিবেশনে ঘোষণা দেন যে “উর্দুই হবে পাকিস্কানের রাষ্ট্র ভাষা।” প্রতিবাদি শেখ মুজিব এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২ মার্চ ঢাবির ফজলুল হক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে তিনি একটি প্রস্তাব পেশ করেন। ঐ বৈঠক থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।১১ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট পালনের সময় শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেল থেকে বের হয়ে তিনি ১৯ মার্চ ঢাবির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধীকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ২১ জানুয়ারি ১৯৪৯ সালে তিনি মুক্তি পেলেও ১৯৫০ সালে ঢাকায় দুর্ভিক্ষ বিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কারনে আবার গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে পশ্চিম পাকিস্তানের পুলিশের গুলি বর্ষণের তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন জেল বসে। এসময় তিনি পায় ১৩ দিন অনশন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।

১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন এবং যুক্তফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে তার দল জয়ী হয়।১৯৫৮ সালে ৭ অক্টোবর আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়ে শেখ মুজিবকে জেলে প্রেরণ করেন। সেসময় ১৯৬১ সালে উচ্চ আদালতে এক রিটের মাধ্যমে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।

এরপর ১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব লাহোরে বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা “আমাদের বাচার দাবি” শিরোনামে পেশ করেন। মূলত ছয় দফার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির মুক্তি তথা স্বাধীনতার এর গুরুত্ব ও পটভূমি তুলে ধরেন যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হলে ১৯৬৯ সালে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে গণঅভ্যুত্থানের
মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে লাখ বাঙ্গালি। যার ফলে বঙ্গবন্ধু দেখা বাঙ্গালীর স্বাধীনতার স্বপ্ন আরো দৃঢ় হতে থাকে। ১৯৬৯ সালে ৫ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে এক জনসভার বঙ্গবন্ধু বলেন:
“একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে বাংলা শব্দটা মুছে ফেলার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। বাংলা শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি যে এখন থেকে এই দেশকে পূর্ব পাকিস্তানের বদলে বাংলাদেশ ডাকা হবে।“
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন-
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
বাঙ্গালী জাতি এ ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালো রাতে অপারেশন সার্চ লাইট এর নামে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা বাঙ্গালীর উপর গণহত্যা চালালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সারা বাংলার মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ের আমরা অর্জন করি এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র “বাংলাদেশ”।

মূলত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় নেতৃত্ব ও এদেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই একটি শোষিত নিপীড়িত বাঙ্গালী জাতিকে দিয়েছিল স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন খাদ্যশস্যে সম্পূর্ণ, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। আমাদের তরুন প্রজন্মের উচিৎ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারন করে দেশের কল্যানে নিবেদিত হয়ে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা।

Comments are closed.

More News...

পুরুষের কাজের প্রেরণা তার প্রিয়তমা …….লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন