২০১৮ সালে সারাদেশে ৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার

২০১৮ সালে সারাদেশে ৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার

বাংলাদেশ সংবাদ – ২০১৮ সালে সারাদেশে ৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক)। বৃহস্পতিবার ( ১০ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বালাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৮: আসকের পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের তদন্ত কর্মকর্তা আবু আহমেদ ফয়জুল কবির।

তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৮ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। বছরজুড়ে ক্রসফাযারে নিহত হয়েছেন ৪৬৬ জন। এরমধ্যে মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে ২৯২ জন নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, নিখোঁজ ও গুমের শিকার হয়েছেন ৩৪ জন। এ থেকে পরবর্তী সময়ে ১৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেলেও তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন মামলায় আটক আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০১৮ সালে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন নারী। এরমধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৬৩ জন ও আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে জানানো হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৭০টি সহিংসতার ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৯ জন ও বিএনপির ৪ জন রয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ সালের ৭০১টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন।

এতে জানানো হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও তথ্য ও যোগাযোগ আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সমরূপ আটটি ধারা সন্নিবেশিত হয়েছে। এসব ধারায় মতপ্রকাশের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির তথ্য তুলে ধরে আবু আহমেদ ফয়জুল কবির আরও বলেন, ২০১৮ সালে বখাটেদের কাছে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৭৩ জন। যার মধ্যে ১১৬ জন নারী। উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৮ জন নারী। এছড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ জন নারীসহ খুন হয়েছেন ১২ জন।

এছাড়া সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ৭ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাড়াছা যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়ছেন ১৯৫ জন। এরমধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন ৮৫ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৬ জন।

অন্যদিকে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪০৯ জন। এছাড়া ৫৮ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ নারী, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ২৬ নারী এবং নির্যাতনেসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ১৮ জন। অপরদিকে অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হন ২২ জন। এরমধ্যে একজন মারা যান।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদায়ী বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে ৯৭টি প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং ২৯টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে একজন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আসক জানায়, বিদায়ী বছরে হামলা, মামলা, হুমকি ও হয়রানিসহ বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০৭ জন সাংবাদিক। এছাড়া দুর্বৃত্তদের হাতে ৩ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়ছেন।

এ বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ৮ জন ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে ৬ জনসহ মোট ১৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আসক জানায়, ২০১৮ সালের এক হাজার ১১ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব কারণে ২৮৩ জন শিশু নিহত, আত্মহত্যা করেছে ১০৮ জন শিশু এবং রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে ২৮ জন শিশুর। এছাড়া যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হয় ৪৪৪ শিশু।

সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ৪৮৪টি দুর্ঘটনায় ৫৯২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া আদিবাসীদের অধিকার পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নসহ তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দীর্ঘদিনের দাবি এখনও পূরণ হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, ত্রুটি এবং চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুসহ রোগীর ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যশা প্রকাশ করে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলেন, ‘সবার সম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার বাস্তবায়নও সরকারের দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে, যে সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে রাষ্ট্র সেসব হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান করবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অধিকার স্বাধীন দেশে কারও নেই।

Comments are closed.

More News...

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

পুরুষের কাজের প্রেরণা তার প্রিয়তমা …….লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল