বাংলাদেশ সংবাদ – অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড.কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন। অনেক কিছু হতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। মোটকথা সবাইকে সক্রিয়ভাবে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। কেউ যদি কোনও প্রকার প্রতিবন্ধকতা বা বাধা সৃষ্টি করে তা সংঘবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’
ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে সকাল সকাল উপস্থিত থাকতে হবে। ভোটারদের ভোট প্রয়োগ নির্বিঘ্ন করতে হবে। ভোটদানে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।’
নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে প্রবীণ এই রাজনীতিক ও সংবিধান প্রণেতা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র, যে অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। এবং সেটা প্রতিষ্ঠায় অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ করতে আমরা যাদের সঙ্গেই কথা বলেছি তারা সবাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন কারও দয়া-মায়ার ব্যাপার না, এটা জনগণের মালিকানার বিষয়।’
শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড.কামাল হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা কোন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা সকলেই জানেন। এটা বিতর্কিত বিষয় নয়, কোর্ট রায় দিয়েছেন। সেখানেও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানের বিধান। এটা খেয়ালিপনার বিষয় নয়। ’৯৬ এ আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায় সরকারের দাবি তুলে বিএনপির নির্বাচন বাতিল করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ও এসেছিল।’
ড.কামাল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী জনসমর্থন পাবো। তখন সংবিধানে যা আছে সেই আলোকে পথচলা অব্যাহত থাকবে। তবে যদি দেখি বা মনে করি জনমতের আলোকে সংবিধানের ঘাটতি পূরণ করা প্রয়োজন তবে জনমতের ভিত্তিতেই সংবিধানে সংশোধনী এনে ঘাটতি দূর করা হবে। সংবিধানে রয়েছে মৌলিক গণতন্ত্র। কাজেই এ ব্যাপারে দ্বিমত করার কি সুযোগ আছে?’
নির্বাচন কমিশন নিজেই সংবিধান অমান্য করে এবং কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই আহ্বায়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তো নিজেই সংবিধান অমান্য করছে। সংবিধান তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ফলে আপনাদের আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে বা যিনি আইন অমান্য করবে তাদেরকে ধরিয়ে দেয়া।’
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে, তবে কোনও ছবি কিংবা ভিডিও করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছেন এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড.কামাল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কোর্টে যেতে পারি।’
‘নিজে নির্বাচন করছেন না, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, বলছেন আদৌ নির্বাচন হয় কিনা’- ড.কামালের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘এটাতে কোনও রহস্যের ব্যাপার নেই। আমার বয়স ৮০ বছর। বঙ্গবন্ধুর সময় আমার সাথে কেবিনেটে যারা ছিলেন তাদের কেউ নেই। একজন আছেন, কিন্তু তার অবস্থা বেঁচে না থাকার মতোই। শুধু আমি একটু কাজ করতে পারছি। এই অবস্থায় আমার নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এতোগুলো যোগ্য ব্যক্তি রাজনীতি করছেন। তাতে আমার ভালো লাগছে। আর নির্বাচন করছি না ঠিকই, কিন্তু আমি কাজ থেকে সরে যাচ্ছি না। আমার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত আজকের না। এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা উচিত নয়।’
বিএনপি কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচনী ইশতেহার দেবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইশতেহার লেখা হচ্ছে, দুই/তিনদিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে।’
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচন করতে হলে তার জন্য যে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে সে বিষয়ে ড.কামাল বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তো লাগবেই। সুষ্ঠু পরিবেশের পরিপন্থি হলো পাইকারি হারে গ্রেফতার করা। এটাকে সুষ্ঠু পরিবেশ বলা যায় না। স্বাভাবিক সুষ্ঠু পরিবেশ না হলে নিবার্চন করা যায় না।’
এসময় বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের একটি তালিকা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও ৬৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন প্রার্থীও আছেন। এটা করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা যেন পালন করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মুক্ত করা হোক।’
এসময় বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু তফসিলের পরও গ্রেফহার-হয়রানি থামছে না। এভাবে চললে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি না দিলে জনগণের কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আশা করবো, ড. কামাল হোসেনের এই সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেফতার বন্ধ হবে। অন্যথায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য নেয়া নতুন অফিসের ঠিকানা দিয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন অফিস হচ্ছে ৩৭/২ পুরনো পল্টন, জামান টাওয়ারের চতুর্থ তলায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা:জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো: মুনসুর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (বীর প্রতীক) প্রমুখ
Comments are closed.
এ রকম আরও খবর
ঢাকায় নৌকার হাট
কবির হোসেন রাজধানীর খিলগাঁও থানার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
| জাতীয়দামি জামদানি কেন লুকিয়ে রাখেন তাঁতি?
অফ হোয়াইট আর সোনালি জরির কাজ করা একটা জামদানি দেখাচ্ছিলেন
| অন্যান্যফলের মেলা
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল
| জাতীয়খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার
খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার খুদে বিজ্ঞানীদের
| তথ্যপ্রযুক্তিফুলের রাজ্য
সবুজ-শ্যামল পাহাড়েঘেরা একটি অপূর্ব জায়গা হবিগঞ্জের ‘দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট’।
| জাতীয়ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি আর গাড়ি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট চলছে। আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে
| জাতীয়পানির এটিএম
এটিএমে টাকা মেলে, এটা পুরোনো কথা। কিন্তু রাজধানীতে এমন দুটি
| অন্যান্যআরেকটি পাকিস্তানি রূপকথা
কে না জানে, ক্রিকেট বিস্ময় উপহার দিতে ভালোবাসে। তাই বলে
| জাতীয়More News...