গোসলের পুকুরসমূহ

গোসলের পুকুরসমূহ

গ্রামের পুকুরে গোসলের নিজস্ব নিয়মে একটা লুঙ্গি ও গামছাকে পাড়ে ঘাসের ওপর এবং সাবানের কেসটাকে ঘাটের কাছে থুয়ে আমি প্রথমে পানিতে ডান পা বাড়ালাম। বাম পা নামানোর আগেই ওদের দিকে চোখ গেল। আঁতকে ওঠার মতো পরিস্থিতি। এত বছর বাদে একসঙ্গে সবাইকে পেয়ে যাব ভাবিনি। কেউ সাঁতার কাটছে, কেউ হাঁটু মাজন করছে, কেউ কোমরপানিতে দাঁড়িয়ে আঁচল বিছাচ্ছে, কেউ ডুব দিচ্ছে, কুলকুচি করছে, কেউ-বা পা দিয়ে তল খোঁজার চেষ্টারত, কেউ তালুতে পানি তুলে ছুড়ছে ওপরে; প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ভঙ্গিতে। ওরা বারো জন। পুকুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। সত্যি আমি আশা করিনি। আমাকে দেখে তারা নিজ নিজ ভঙ্গিমা মুলতবি করে সমস্বরে আহ্বান করতে থাকল, ‘আসো, আসোও, আসোওও না।’ যেন আমি আসব—এটা ওরা জানত। আর এলেই ওদের সঙ্গে গোসলে ডাকবে, এটাও ঠিক করে রাখা। আমার ভয় বা অপ্রস্তুত হওয়ার কিছু নেই। আমি স্থলে ওদের সবার সঙ্গ পেয়েছি। জলে এই প্রথম। প্রেম পৃথিবীর সর্বত্র এক—স্থল কিংবা জল যেখানেই হোক। ওরা সবাই আমার প্রেমিকা। বিভিন্ন সময়ের—জীবনে প্রথম পুকুরে গোসল করার সময় থেকে শুরু করে।

একে একে সবার দিকে তাকাচ্ছি আমি। এত বছর বাদে সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার বিস্ময় নেই আমার মধ্যে। ধীরে ধীরে পুকুরে নামতে থাকলাম। কিন্তু অজানা কারণে ওরা পিছিয়ে যেতে থাকল। শেষমেশ আমি সাঁতরে পৌঁছে গেলাম পুকুরের মাঝখানে, যেটাকে গোলাকার পুকুরটার কেন্দ্রও বলা যায়। ওরা ততক্ষণে পাড়ে উঠে গেছে। এটাও কি পূর্বপরিকল্পিত? পুকুরের পাড়ে—যাকে বৃত্তাকার পুকুরের পরিধিও ধরা যায়—নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে রেখে তারা একেকজন বসেছে সুবিধামতো আসনে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

রফিকুল হক দাদু ভাইয়ের স্মরণে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

বাবা দিবসের কবিতা: আমার বাবা মো. মাহফুজুর রহমান